গণিতশাস্ত্রে আমাদের হিন্দুদের অবদান কি?
আমরা অনেকেই
বিজ্ঞানের ছাত্র, গণিতের ছাত্র। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমরা অনেকেই জানি না,
গণিতশাস্ত্রে আমাদের হিন্দুদের অবদান কি?
সারাজীবন আমরা যে মজার মজার সূত্র গুলো
পড়ে আসছি তাদের বেশীর ভাগ কিন্তু আমাদের মহান হিন্দু মনীষীদের আবিস্কার। আমি নিজেও জানতাম না, কিন্তু যখন জানতে পারলাম আমি বিস্মিত ও অনুপ্রাণিত
গণিতশাস্ত্রে হিন্দু মনীষীদের অতুলনীয় অবদান দেখে।
১। প্রথমেই তুলে ধরছি, আর্যভট্ট্(৪৭৬-৫৩০) এর কথা হিন্দু
গণিতবিদদের মধ্য অন্যতম, যার
কর্মালোকে হিন্দু গণিতশাস্ত্র বিশ্বসভায় নিজের স্থান সুদৃঢ় করে তোলে। গণিতশাস্ত্রে হিন্দু
মনীষীদের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য অবদানের একটি হল আর্যভট্ট্ এর দশমিক
স্থানিক অঙ্কপাতন পদ্ধতি ও ‘শূন্য’ এর আবিষ্কার। অবশ্য এর আগে খ্রীষ্টপূর্ব
২০০ তে পিঙ্গলের ‘ছন্দসূত্রে’ শূন্যের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।আর্যভট্ট
রচিত ‘আর্যভটীয়’ নামক গ্রন্থে দ্বিঘাত প্রথম মাত্রার অনির্ণেয় সমীকরণের সমাধান ও π এর নির্ভুল মান এর উল্লেখ
পাওয়া যায়। বর্গমূল নির্ণয়ের পদ্ধতিও আর্যভট্টের আবিষ্কার। ২। গণিত এর ছাত্র মানেই, “x=(-b±√(b^2-4ac))/2a” সূত্র সম্পর্কে অবগত। যার আবিষ্কারকের নাম শ্রীধর। দ্বিঘাত সমীকরণের মাত্রা নির্ণয়ের এই সূত্রটি ‘শ্রীধরাচার্যের উপপাদ্য’ নামে প্রচলিত।
৩। বরাহমিহির (ষষ্ঠ শতাব্দীর প্রথম ভাগে), যিনি ‘পঞ্চসিদ্ধান্তিকা’ গ্রন্থে sin30 ও sin 60 এর মান নির্ণয় করে দেখিয়েছেন। বর্তমান ত্রিকোণমিতিতে ব্যবহৃত মূল সূত্রগুলিও বরাহমিহির এর আবিষ্কৃত।
৪। ভাস্করাচার্য (দ্বাদশ শতাব্দী), তাঁর লেখা বিখ্যাত গ্রন্থখানি হল চারখন্ডে সমাপ্ত ‘সিদ্ধান্ত শিরোমণি’। যার প্রথম ২টি খন্ড লীলাবতি ও বীজগণিত এ পাটীগণিত ও বীজগণিত এর বিভিন্ন বিষয় আলোচিত হয়েছে।
“একটি ঋণাত্মক রাশিকে অপর একটি ঋণাত্মক রাশি দ্বারা গুণ করলে ধনাত্মক রাশি এবং একটি ঋণাত্মক ও অপর একটি ধনাত্মক রাশি গুণ করলে ঋণাত্মক রাশি পাওয়া যায়”, বীজগনিতের এই সিদ্ধান্ত ভাষ্কর এর আবিষ্কার।
৫। ব্রহ্মগুপ্ত(৫৮৮-৬৬০ খ্রিঃ), যিনি পিরামিড ফ্রাস্টাম এর আয়তন নির্নয় সম্পর্কিত সূত্র আবিষ্কার করেন।এখানে, আমি সামান্য কিছু অংশই তুলে ধরেছি। এটা আমাদের জানতে হবে যে, হাজার হাজার বছর আগে যখন পৃথিবীতে জ্ঞান ও ধর্মকে একত্রিত করা হয়েছিল ঈশ্বরের উপাসনার জন্য, ঠিক তখন থেকেই আমাদের এই উপমহাদেশেও জ্যামিতি, গণিত ও ধর্মের বিভিন্ন রীতির সংমিশ্রন ঘটেছিল। বৈদিক যুগে ধর্ম কর্মের জন্য প্রয়োজন হত নানা ধরণের যজ্ঞাদি ক্রিয়া কান্ড। এই যজ্ঞানুষ্ঠানের একটি অপরিহার্য অঙ্গ ছিল যজ্ঞবেদী নির্মাণ।
যার জন্যই সংখ্যা ও জ্যামিতির বিভিন্ন বিস্ময়কর বৈশিষ্ট্যই গণিতবিদ ও পুরোহিতদের অনুপ্রাণিত করেছিল গণিতশাস্ত্রকে বিভিন্ন ধর্মবিষয়ক কাজে ব্যবহার করার। আর সেই থেকেই মূলত শুরু হয় হিন্দুদের গণিতচর্চা। (সংগ্রহকৃত)
No comments:
Post a Comment