Sunday, May 24, 2015

জামাই ষষ্ঠী'১৫

গ্রাম ও শহরে জামাই ষষ্ঠীর রেওয়াজটা পুরোপুরি উঠে যায়নিÑ এখনও রয়েছে। জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষে ষষ্ঠী তিথিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের নারীরা ষষ্ঠী পূজা করেন। ষষ্ঠীকে সন্তান-সন্তুতি দেবী বা দেববহির্ভূত লৌকিক দেবীও বলা যায়। ঘর ও মন্দিরের বাইরে বট, করমচার ডাল পুঁতে প্রতীকী অর্থে অরণ্য রচনা করে এ পূজা করা হয়। এজন্য জামাই ষষ্ঠীকে অরণ্য ষষ্ঠীও বলা যায়। এ পূজায় ধর্মীয় সংস্কারের চেয়ে সামাজিকতা বিশেষ স্থান পেয়েছে।

আশুতোষ ভট্টাচার্য বলেছেন, এ পূজার লক্ষ্য সন্তান উৎপাদনের জন্য শাশুড়ি কর্তৃক জামাই সংবর্ধনা।ষষ্ঠী পূজায় ব্রতীরা সকালে øান করে উপবাস থেকে নতুন পাখার ওপর আম্রপল্লব, আমসহ পাঁচফল আর ১০৮টি দুর্বাবাঁধা আঁটি দিয়ে পূজার উপকরণের সঙ্গে রাখে। করমচাসহ পাঁচ-সাত বা নয় রকমের ফল কেটে কাঁঠাল পাতার ওপর সাজিয়ে পূজার সামনে রাখতে হয়। ধান এ পূজার সমৃদ্ধির প্রতীক, বহু সন্তানের প্রতীক হিসেবে ব্যবহƒত হয় এবং দুর্বা চিরসবুজ, চির সতেজ অসীমতার বেঁচে থাকার ক্ষমতার অর্থে ব্যবহƒত হয়। অর্থাৎ দুর্বা হল দীর্ঘ জীবনের প্রতীক। শাশুড়ি-মেয়ে-জামাতার দীর্ঘায়ু কামনা করে ধানদুর্বা দিয়ে উলুধ্বনিসহ ষাট ষাট বলে বরণ করেন। প্রবাদে আছে, যম-জামাই ভাগনা-কেউ নয় আপনা। কারণ যম মানুষের মৃত্যু দূত। জামাই এবং ভাগনা অন্যের বাড়ির উত্তরাধিকারী। তাদের কখনও নিজের বলে দাবি করা যায় না। এদের খুশি করার জন্য মাঝে মাঝেই আদর আপ্যায়ন করে খাওয়াতে হয়। তাই মেয়ে যাতে সুখে-শান্তিতে তার দাম্পত্য জীবন কাটাতে পারে এজন্য জ্যৈষ্ঠ মাসে নতুন জামাইকে আদর করে বাড়িতে ডেকে এনে আম-দুধ খাইয়ে পরিতৃপ্ত করে। আশীর্বাদস্বরূপ উপহারসমাগ্রীও প্রদান করে।কোনও কোনও অঞ্চলে শ্যালিকারা বাঁশের শলা বেঁকিয়ে হƒদয়ের আকার করে তার মধ্যে লাল সুতা দিয়ে ধান বেঁধে ভগ্নিপতিকে জামাই ষষ্ঠীর উপহার দেয়। এ প্রথাটা সর্বত্র দেখা যায় না।কোনও কোনও অঞ্চলে আবার সদ্যøাত ব্রতীরা পূজার সময় নতুন পাখার ওপর আম্রপল্লব, আম আর ১০৮টি দুর্বা বাঁধা আঁটি দিয়ে পুকুরে কোমর জলে নেমে উলুধ্বনিসহ নতুন প্রকৃতিকে ষাট ষাট বলে বরণ করেন। নারীর কণ্ঠে এ উচ্চারণ জীব-প্রকৃতি-পরিবেশ-মানবতা রক্ষার আহ্বান করে পূজা শেষে ষষ্ঠীর সুতা সবার হাতে বেঁধে পরিবার-সমাজকে এক প্রীতির বন্ধনে বাঁধেন। ষষ্ঠী পূজার ব্রত পাঠের সময় নারীরা ১০৮টি দুর্বার গিঁট খুলে সাতবার গণনা করেন।পুরনো ঢাকা এবং চট্টগ্রামে মেয়ের বিয়ে পাকা হলে তখন উভয়পক্ষ নিমন্ত্রণ করে জ্যৈষ্ঠ মাসে আম-দুধ খাওয়ানোর প্রচলন রয়েছে। এছাড়াও বারোমাসির গানে দেখা যায়, জ্যৈষ্ঠ মাসে জামাতাকে শ্বশুরবাড়ি থেকে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানিয়ে এসে আম-দুধসহ অন্যান্য খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যেও জ্যৈষ্ঠ মাসে জামাতাকে বাড়িতে এনে আম-দুধ খাওয়ানোর রেওয়াজ রয়েছে। তবে জামাই ষষ্ঠীর উপাচারগুলো সব অঞ্চলে এক রকম নয়। অঞ্চল ভেদে এর ভিন্নতা রয়েছে।
(রীতা ভৌমিক)

No comments:

Post a Comment